গত ৯ এপ্রিল রবিবার ৬টার দিকে নাটোর শহরের আলাইপুর মহল্লায় আনোয়ার হোসেনর অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়, সংখ্যালঘু বিধবা নারী জয়ার বাড়িতে হামল...
গত ৯ এপ্রিল রবিবার ৬টার দিকে নাটোর শহরের আলাইপুর মহল্লায় আনোয়ার হোসেনর অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়, সংখ্যালঘু বিধবা নারী জয়ার বাড়িতে হামলা ও জয়ার বাবা ও ভাইকে মারধর করে আনোয়ার হোসেন।
আনোয়ার হোসেন (৪০) নাটোর শহরের মল্লিকহাটি এলাকার আরশেদ আলীর ছেলে।
ভুক্তভোগী জয়া ও তার পরিবার জানান-
প্রায় এক বছর আগে জয়ার স্বামী মারা যান। পরে তিনি একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে বাবা তাপস আচার্য্যের সাথে নাটোর শহরের মল্লিকহাটি মহল্লায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। স্বামী না থাকায় জয়ার উপর কু-নজর পড়ে একই মহল্লায় বখাটে আনোয়ারের। আনোয়ার প্রায় তাকে রাস্তাঘাটে ও মোবাইলে উত্যক্ত করাসহ অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় আনোয়ার প্রায় তাকে ও তার পরিবারের লোকজনকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিত।
এছাড়া বাড়ী ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করা হয়। আনোয়ারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে জয়ার পরিবার নাটোর শহরের দক্ষিণ আলাইপুর মহল্লায় ভাড়া বাড়িতে উঠেন। এরই এক পর্যায়ে রবিবার রাত আনোয়ার জয়ার মোবাইলে কল দিতে থাকে। কিন্তু কল রিসিভ না করায় রাতে আনোয়ার ও তার কয়েকজন সহযোগী জয়ার বাড়ীতে যায়।
এসময় তারা জয়ার মা ও বাবা ও ভাই তন্ময় আচার্য্যকে মারপিট করে রাস্তায় বের করে দেয়। পরে আনোয়ার জোরপূর্বক জয়াকে ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ করেন জয়া।
এসময় কোনমতে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয় জয়া। পরে হামলাকারীরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দিতে দিতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী জয়া বাদী হয়ে রাতেই নাটোর সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
রবিবার রাতে জয়ার বাড়িতে গিয়ে সরজমিনে দেখা যায়-
তাদের বাড়ির সমস্ত আসবাব পত্র ও কাপড় চোপড় এবং দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসিপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।
জয়া বলেন-
আমার ৬/৭ বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে। কোনদিন আমার চরিত্রে কলঙ্কের দাগ লাগতে দিইনি। কিন্তু আনোয়ারের অত্যাচারে আমার শিশু কন্যার মুখের দিকে চেয়ে না পারছি মরতে, না পারছি বাঁচতে। টিউশানি করে আমি আমার দরিদ্র বাবা মাকে সহায়তা করার চেষ্টা করছি।
রবিবার ফোনে আনোয়ার আবারো অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। না হলে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। বিষয়টি আমি পুলিশকে জানালে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বাড়িতে রবিবার রাতে হামলা করে জিনিসপত্র তছনছ করাসহ জোর করে আমাকে ঘরে ঢুকিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এলাকাবাসী জড়ো হলে তারা চলে যায়। এসময় জয়া তার মোবাইল ফোনে আনোয়ার অশ্লীল কথাবার্তা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অডিও কল শুনান।
জয়ার বাবা তাপস আচার্য্য জানান-
আনোয়ারের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাকে ও আমার মেয়েকে প্রাণনাশ, মারপিট ও বাড়ী ছাড়া করার হুমকি দিত। এর আগেও তারা আমাকে ও আমার ছেলেকে প্রকাশ্য রাস্তায় মারধর করাসহ আমার মেয়েকে তার হাতে তুলে দিতে বলে। বাধ্য হয়ে মল্লিকহাটি থেকে আলাইপুরে ভাড়া বাসায় উঠি। এখানে এসেও রেহাই পায়নি আমার পরিবারের সদস্যরা।
রবিবার রাতে প্রথমে আমাকে মারধর করে পরে আমার বড়িতে হামলা চালায়। আনোয়ারের অত্যাচারে আমার মেয়ে ও পরিবার অসহায়। আমরা কোথায় যাব? আনোয়ারের ভয়ে এলাকার লোক প্রতিবাদ করতে সাহস করেন না।
নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ নাছিম আহমেদ জানান-
এই ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাতেই অভিযান চালিয়ে আনোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আনোয়ার একজন বখাটে ও খারাপ লোক। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
No comments
আপনার কমেন্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!