স্কুলে যাওয়া ও আসার পথে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় এক হিন্দু পরিবারের তিনজনসহ চারজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। ১৪ জুন বুধবার রাত ৮টার দিকে সাতক...
স্কুলে যাওয়া ও আসার পথে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় এক হিন্দু পরিবারের তিনজনসহ চারজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে।
১৪ জুন বুধবার রাত ৮টার দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুই নারীসহ তিনজনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন- আশাশুনি উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের অরবিন্দ ঢালীর ছেলে কৃষ্ণপদ ওরফে খোকন ঢালী (৪৪), তার মেয়ে বড়দল আফতাবউদ্দিন কলিজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী চন্দ্রিমা ঢালী ওরফে ঋতু ঢালী (১৬), একই গ্রামের নকুল গোলদারের স্ত্রী ফুলমতি গোলদার (৬০) ও কৃষ্ণপদ ঢালীর ছেলে স্বপন ঢালী (২৬)। এদের মধ্যে প্রথমাক্ত তিনজনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে হামলার ঘটনায় যাতে মামলা না হয় সেজন্য খাজরা ইউপি’র ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য সাইফুল ইসলাম বাচ্চু বুধবার রাতে সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে এসে যাতে মামলা না করা হয় সেজন্য নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চন্দ্রিমা ওরফে ঋতু ঢালী জানান- স্কুলে যাওয়া ও আসার পথে একই গ্রামের রশিদ মোড়লের বখাটে ছেলে মোহাম্মদ মোড়ল (২৪) তাকে দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করে আসছে। তার সহযোগী হলো রাউতাড়া গ্রামের সলেমানের ছেলে রানাসহ কয়েকজন।
গত ৭ জুন সকাল ৯টার দিকে বাড়ি থেকে স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর মোহাম্মদ আলী তার কয়েকজন বন্ধু তাকে উদ্দেশ্য করে নানা কটুক্তি করতে থাকে। কোন রকমে তিনি স্কুলে চলে যান। বাড়ি ফিরে বিষয়টি তার পরিবারের সদস্যদের অবহিত করেন। মোহাম্মদ মোড়লকে তাৎক্ষণিক রাস্তায় পেয়ে প্রতিবাদ করেন তার ভাই স্বপন ঢালী।
বুধবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুর বিলে অবস্থান করাকালে ভাই স্বপন ঢালীকে এলোপাতাড়ি কিল ও ঘুষি মেরে আহত করে মোহাম্মদ মোড়ল ও তার সহযোগী রাউতাড়া গ্রামের সলেমানের ছেলে রানা। ভাই স্বপনের চিৎকারে স্থানীয়রা রানাকে আটক করে গ্রাম পুলিশ সনাতন মন্ডলের জিম্মায় দেয়। পালিয়ে যায় মোহাম্মদ মোড়ল। খবর পেয়ে তিনিসহ বাবা কৃষ্ণপদ ঢালী, ফুলমতি গোলদারসহ কয়েকজন ওই বাড়িতে আসেন।
গ্রাম পুলিশ সনাতন মন্ডল জানান- রানাকে তিনি বাড়িতে বসিয়ে রেখে বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমকে জানান। রানা তার বাবা সলেমান গাজীকে মোবাইলে অবহিত করে। রাত ৮টার দিকে সলেমান গাজী তার কালো রং এর ডিসকভার মটর সাইকেলে (খুলনা মেট্রো-ল-১২-৪২৪৩) তার বাড়িতে আসে।
কোন কিছু শোনার আগেই ও তার বাড়ি তৈরির জন্য রাখা মেহগণি কাঠের বাটাম দিয়ে ওই বাড়িতে অবস্থানকারি কৃষ্ণপদ ঢালী, তার মেয়ে চন্দ্রিমা ঢালী ও প্রতিবেশী ফুলমতি গোলদারকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেন সলেমান, রানা ও মোহাম্মদ মোড়ল। স্থানীয়রা ছুঁটে এলে হামলাকারিরা পালিয়ে যান।
তবে মোটর সাইকেল তার বাড়িতে ফেলে যান সলেমান গাজী। স্থানীয়রা গুরুতর জখম তিনজনকে রাত সোয়া ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। বিস্তারিত তিনি খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুর রহমান ও কর্তব্যরত পুলিশ পরিদর্শক আইয়ুব আলীকে জানিয়েছেন।
এদিকে স্থানীয়রা জানান- রাউতাড়া গ্রামের সলেমান গাজী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের নাম ব্যবহার করে নিজেকে গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব এর সোর্স পরিচয়ে এলাকায় দীর্ঘদিন সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে বড়দল বিলে অস্ত্র কেনা বেচার সময় রাউতাড়া গ্রামের বিধান ও রড়দলের নিত্য গ্রেপ্তার হলেও সলেমান পালিয়ে যায়।
২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ভোর সাড়ে চারটার দিকে নিজ গেরের বাসা থেকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার হন সলেমান (জিআর-৩৫/১৩ আশা)। ২০২১ সালে ইউপি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতা শরবৎ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী সলেমান। এ ছাড়া এলাকয় চাঁদাবাজি, ঘের দখলসহ কমপক্ষে ১০টি মামলা রয়েছে সলেমানের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা আরো জানায়- দুর্গাপুর গ্রামের রশিদ মোড়লের ছেলে মোহাম্মদ মোড়ল একজন বখাটে ও মাদকাসক্ত। কয়েক বছর আগে কাপষা গ্রামে বিয়ে করলেও মাদকাসক্তির কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক হয়ে যায়। এরপর থেকে সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সলেমান ও তার ছেলে রানার সহযোগিতায় মোহাম্মদ মোড়ল আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। শুধুমাত্র চন্দ্রিমা ঢালী নয়, স্কুল পড়ুয়া অনেক মেয়েকে সে উত্যক্ত করলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
এদিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দুইজন দায়িত্বশীল কর্মী জানান- বুধবার সোয়া ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে কৃষ্ণপদ ঢালী, চন্দ্রিমা ঢালী ও ফুলমতি গোলদারকে জরুরী বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ সময় খাজরা ইউপি’র ৬নং ওয়ার্ড সদস্য সাইফুল ইসলাম বাচ্চু দীর্ঘ সময় জরুরী বিভাগে অবস্থান করেন। নির্যাতিতদের বিরুদ্ধে মামলা না করে মীমাংসা করে নেওয়ার জন্য তিনি চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। একপর্যায়ে রাত একটার দিকে তিনি চলে যান। মামলা না করে মীমাংসা করে নেওয়ার জন্য বার বার চাপ সৃষ্টির কথা নিশ্চিত করেছেন দুর্গাপুর গ্রামের স্বপন ঢালী।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান- আঘাতের ফলে চন্দ্রিমা ও ফুলমতি এর মাথায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকের মাথায় কয়েকটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কৃষ্ণপদ ঢালীর বাম কপালের উপরে মাথায় ভারী জিনিস দিয়ে আঘাতের ফলে কয়েকটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। তার ডান কাঁধের কলার বন ভেঙে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় এক্স-রে করতে বলা হয়েছে।
খাজরা ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন- তিনি স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসার কথা বললেও নির্যাতিত পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করেন নি।
তবে সলেমান গাজীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুর রহমান বৃহষ্পতিবার সকালে এ প্রতিনিধিকে জানান- বিষয়টি তার জানা নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
-HTPC
No comments
আপনার কমেন্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!