Maa Sarada -র প্রতিটি বাণী ব্যক্তির চঞ্চল মনকে শান্ত করতে পারে। সারদা রামকৃষ্ণ আন্দোলনের বিকাশ ও প্রসারে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। সারদা মায়ের...
Maa Sarada -র প্রতিটি বাণী ব্যক্তির চঞ্চল মনকে শান্ত করতে পারে। সারদা রামকৃষ্ণ আন্দোলনের বিকাশ ও প্রসারে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। সারদা মায়ের বাণী ব্যক্তির চিন্তা-ভাবনার দিশাকে নতুন মোড় দেয়। প্রবল দুশ্চিন্তা, নেতিবাচক ভাবনায় জড়িয়ে থাকা মনকেও ইতিবাচক করে তুলতে পারে। অধৈর্যদের ধৈর্যের শিক্ষা দেয় মা সারদার এই বাণী। পাশাপাশি মানুষকে পরিশ্রম করতে শেখায়। বহু যুগ আগে শ্রী শ্রী মায়ের বলা বাণীগুলি আজকের যুগেও প্রাসঙ্গিক। এখানে মা সারদার কয়েকটি বাছাই করা বাণী দেওয়া হল।
১. 'কাজ করা চাই বইকি, কর্ম করতে করতে কর্মের বন্ধন কেটে যায়, তবে নিষ্কাম ভাব আসে। একদণ্ডও কাজ ছেড়ে থাকা উচিত নয়।'
২. 'ভাঙতে সবাই পারে, গড়তে পারে ক'জনে? নিন্দা ঠাট্টা করতে পারে সব্বাই, কিন্তু কী করে যে তাকে ভালো করতে হবে, তা বলতে পারে ক'জনে?'
৩. 'কত সৌভাগ্য, মা এই জন্ম, খুব করে ভগবানকে ডেকে যাও। খাটতে হয়, না-খাটলে কি কিছু হয়? সংসারে কাজকর্মের মধ্যেও একটি সময় করে নিতে হয়।'
৪. সারদা মাকে তাঁর এক ভক্ত জিগ্যেস করেন, 'মা, ভগবানের নাম করলেও কি প্রারব্ধ ক্ষয় হয় না?' মা বলেন, 'প্রারব্ধের ভোগ ভুগতেই হয়। তবে ভগবানের নাম করলে এই হয়-- যেমন একজনের পা কেটে যাবার কথা ছিল, সেখানে একটা কাঁটা ফুটে ভোগ হল।'
৫. 'বাসনা থাকতে জীবের যাতায়াত ফুরায় না, বাসনাতেই দেহ হতে দেহান্তর হয়। একটু সন্দেশ খাবার বাসনা থাকলেও পুনর্জন্ম হয়।... বাসনাটি সূক্ষ্ম বীজ, যেমন বিন্দুপরিমাণ বটবীজ হতে কালে প্রকাণ্ড বৃক্ষ হয়, তেমনই। বাসনা থাকলে পুনর্জন্ম হবেই, যেন এক খোল থেকে নিয়ে আর এক খোলে ঢুকিয়ে দিলে। একেবারে বাসনাশূন্য হয় দু-একটি। তবে বাসনায় দেহান্তর হলেও পূর্বজন্মের সুকৃতি থাকলে চৈতন্য একেবারে হারায় না।'
৬. 'কর্মফল ভুগতে হবেই। তবে ঈশ্বরের নাম করলে যেখানে ফাল সেঁধুত, সেখানে সুঁচ ফুটবে। জপ তপ করলে কর্ম অনেকটা খণ্ডণ হয়। যেমন সুরথ রাজা লক্ষ বলি দিয়ে দেবীর আরাধনা করেছিল বলে লক্ষ পাঁঠায় মিলে তাঁকে এক কোপে কাটলে। তার আর পৃথক লক্ষ বার জন্ম নিতে হল না। দেবীর আরাধনা করেছিল কিনা। ভগবানের নামে কমে যায়।'
৭. ওকি গো, মানুষের মনে আঘাত দিয়ে কি কথা বলতে আছে? কথা সত্য হলেও অপ্রিয় করে বলতে নেই। শেষে ঐরূপ স্বভাব হয়ে যায়। মানুষের চক্ষুলজ্জা ভেঙে গেলে আর মুখে কিছু আটকায় না। ঠাকুর বলতেন, 'একজন খোঁড়াকে যদি জিজ্ঞাসা করতে হয়, তুমি খোঁড়া হ'লে কি করে?--তাহলে বলতে হয়, তোমার পা-টি অমন মোড়া হ'ল কি করে?
৮. 'মানুষ তো ভগবানকে ভুলেই আছে। তাই যখন যখন দরকার, তিনি নিজে এক একবার এসে সাধনা করে পথ দেখিয়ে দেন। এবার দেখালেন ত্যাগ।'
৯. 'দয়া যার শরীরে নাই, সে কি মানুষ? সে তো পশু। আমি কখনও কখনও দয়ায় আত্মহারা হয়ে যাই, ভুলে যাই যে আমি কে।'
১০. একদিন সন্ধ্যায় মা কথাপ্রসঙ্গে বলেন, 'আমি আর কারও দোষ দেখতে শুনতে পারিনে, বাবা, প্রারব্ধ কর্ম যার যা আছে। যেখানে ফালটি যেত সেখানে ছুঁচটি তো যাবে? আমার কাছের দোষের কথা বললে। তখন এরা সব কোথায় ছিল? সে আমার কত সেবা করেছে। আমি তো তখন ভাইদের ঘরে ধান সিদ্ধ করি। বউরা সব ছোট। সে শীত বর্ষা গ্রাহ্য না করে সকাল থেকে গায়ে কালি মেখে আমার সঙ্গে বড় বড় ধানের হাঁড়ি নামাত। এখন তো অনেকে ভক্ত হয়ে আসে। তখন আমার কে ছিল! আমরা কি সেগুলো সব ভুলে যাব? তা লোকেরই বা দোষ কি? আমারও আগে লোকের কত দোষ চোখে ঠেকত। তারপর ঠাকুরের কাছে কেঁদে কেঁদে, ঠাকুর, আর দোষ দেখতে পারি নে বলে কত প্রার্থনা করে তবে দোষ দেখাটা গেছে। মানুষের হাজার উপকার করে একটু দোষ কর, মুখটি তখনই বেঁকে যাবে। লোক কেবল দোষটি দেখে। গুণটি দেখা চাই।'
১১. 'জানবে এই তিনটির সম্বন্ধে খুব সাবধানে চলতে হয়-- প্রথম নদীর তীরে বাসস্থান- কোন সময়ে নদী হুশ করে এসে বাসস্থান ভেঙে নিয়ে চলে যাবে। দ্বিতীয়, সাপ দেখলেই খুব সাবধানে থাকতে হয়, কখন এসে কামড়ে দেবে তার ঠিক নেই। তৃতীয়, সাধু- তাঁদের কোন কথায় বা মনের ভাবে গৃহস্থের অমঙ্গল হতে পারে তা তুমি জান না। তাঁদের দেখলে ভক্তি করতে হয়, কোনও জবাব করে অবজ্ঞা দেখানো উচিত নয়।
-এই সময়
No comments
আপনার কমেন্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!