আতঙ্কিত সংখ্যালঘু পরিবারের নারীরা। ছবি : কালবেলা ২০২২ সালের ৪ জুনের ঘটনা। জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউন...
আতঙ্কিত সংখ্যালঘু পরিবারের নারীরা। |
২০২২ সালের ৪ জুনের ঘটনা। জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের দাসপাড়ায় নির্মমভাবে নেমে আসে সংখ্যালঘুর ওপর হামলা। ওই ঘটনার পর থেকেই মামলা, নির্যাতন, হুমকিসহ নানা বিষয় নিয়মিত লেগেই আছে। এতে প্রতিটি মুহূর্তেই সেই ঘটনার জের হিসেবে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সেই পরিবারের সদস্যরা।
ঘটনার বিবরণে এখনো হুহু করে কেঁদে ওঠে সংখ্যালঘু পরিবারটি। এখনো সেই ঘটনার দৃশ্য মনে পড়লে শরীর শিউরে ওঠে তাদের। নিরাপত্তার জন্য বাড়ির চারপাশে লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ভয়ে কাঁপেন তারা। ভয় পান সংসারের দৈনন্দিন বিভিন্ন প্রয়োজনে বাজারে যেতেও। সীতাকুণ্ডের নিজ বাড়িতে এমন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তাদের অসহায় ও নিরাপত্তাহীন জীবনের বিষয়টিও তুলে ধরেন পরিবারের সদস্যরা।
মামলার বিবরণ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়-
জীবিকার তাগিদে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা প্রবাসে থাকেন। এই সুযোগে গত বছরের ৪ জুন জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধে ওই পরিবারের ওপর হামলা করেন স্থানীয় আমিন সওদাগরের ছেলেরা। নারীদের লাঠি-রড দিয়ে পেটানো হয়। সেই দৃশ্যের ভিডিও ভাইরাল হলে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে।
পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে হামলাকারীদের। ঘটনার দুই মাস পর এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু দুই মাস পর জামিন পান তারা। জামিনে মুক্ত হয়ে ফের হুমকি দিতে থাকে সংখ্যালঘু ওই পরিবারকে। এ ঘটনায় রীমা রানী দাস সীতাকুণ্ড থানায় তৌহিদুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন ও তাদের বাবা আমিন সওদাগরের নামে মামলা করেন। ওইদিনই পুলিশ আমিন সওদাগরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। বয়স্ক হওয়ায় আদালত আমিন সওদাগরকে জামিন দিয়েছেন। তবে ঘটনার দুই মাস পর তার দুই ছেলেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কেন্দ্রীয় পূজা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল কুমার পাল বলেন-
এ ঘটনা মর্মান্তিক। এ বিষয়ে জেলা ঐক্য পরিষদ নেতারাসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলাম। তখন জেলা পুলিশ সুপার স্থানীয় পুলিশকে সব ধরনের আইনগত সহযোগিতার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন-
এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবে স্থানীয় প্রশাসন আরও একটু আন্তরিক ও কঠোর হলে অসহায় পরিবার শান্তি ও নিরাপত্তায় বসবাস করতে পারবে।
চট্টগ্রাম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সদস্য ও সীতাকুণ্ড উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশীষ শর্মা কালবেলাকে বলেন-
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো বাংলাদেশ। এটি একটি স্বাধীন ও অসাম্প্রদায়িক দেশ। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতকারী স্বার্থান্বেষী মহল সংখ্যালঘুকে দুর্বল ভেবে এ ধরনের ঘৃণিত কাজ করে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সীতাকুণ্ড উপজেলার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহাব উদ্দিন বলেন-
এ বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সালিশ বৈঠকে আমিন সওদাগরের ছেলেরা বাহির থেকে ৫০ থেকে ৬০ জন লোক ভাড়া করে এনে পেশিশক্তি দেখাত। এ ছাড়া তারা দস্যু প্রকৃতির। প্রতিটি বৈঠকে সমাধানের শেষ প্রান্তে এলে তারা বৈঠক বানচাল করে দিত। ১২ বছর আগে আমিন সওদাগর এখানে বাড়ি করেছে। আর ওই হিন্দু পরিবারটি যুগ যুগ ধরে এখানে বসবাস করছে। ওই পরিবারটির বাড়ি যাওয়ার রাস্তাও বন্ধ করে দিয়েছে আমিন সওদাগর। আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে কয়েকবার সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।
নির্যাতিত ও নিরাপত্তাহীনতায় থাকা সংখ্যালঘু পরিবারের ছেলের বউ রীমা রানী দাস বলেন-
যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে, সেটি আমাদের ক্রয়কৃত সম্পত্তি। এই জমিকে কেন্দ্র করে ২০২১ সালেও আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। সর্বশেষ গত বছরের ৪ জুন আবার হামলা করা হয়। হামলার শিকার নারীরা হলেন যোগেন্দ্র চন্দ্র দাসের স্ত্রী শ্রীমতি রানী দাস, মিলন চন্দ্র দাসের স্ত্রী অঞ্জনা রানী দাস ও কৃষ্ণ চন্দ্র দাসের স্ত্রী রীমা রানী দাস।
‘আমাদের বাড়ির সঙ্গে একটি পুকুর আছে। ওই পুকুরের কিছু জমি আমাদের আর কিছু জমি ওদের (আসামিদের)। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সালিশ করে বলেছেন, দুই পরিবারই পুকুরটি ব্যবহার করবে। মাছও ভাগ করে নেবে। কিন্তু তারা আমাদের পুকুরের কাছে যেতে দেয় না। পুকুরের পাশে কিছু জমি আছে, সেগুলো পুরোটাই আমাদের। সেই জমিটাও তারা দখলে রেখেছে। চাষাবাদও করে তারা। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। যে কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করলেই মারধর করে তারা। আমাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা দেশের বাইরে থাকেন, তাই আমরা ঝামেলা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। বয়স্ক শাশুড়ি আর আমরা তিনজনই নারী।
সীতাকুণ্ড থানার ওসি (তদন্ত) আবু সাঈদ বলেন-
‘মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। অভিযোগের ব্যাপারে আমি অবগত নই। আদালত আদেশ দিলে আমরা যে কোনো ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’\
নিউজ- কালবেলা
No comments
আপনার কমেন্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!