গত ৯ মার্চ বৃহস্পতিবার ভোরে সিলেট-ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর ইউপির স্কুল রোডে তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান অরুণোদয় পাল ঝলকের নির্মাণাধীন একতলা ভবন...
গত ৯ মার্চ বৃহস্পতিবার ভোরে সিলেট-ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর ইউপির স্কুল রোডে তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান অরুণোদয় পাল ঝলকের নির্মাণাধীন একতলা ভবনের ছাদ থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী দিপা রানী সিংহের (১৪) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত দিপার কথিত প্রেমিক বালাগঞ্জের ইমনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়-
গত ৮মার্চ বুধবার রাতের খাবের খেয়ে পিতা পীযুষ চন্দ্র সিংহের সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমিয়ে পরে দিপা সিংহ। ভোর ৫টার দিকে পিতা পীযুষ সিংহ ঘুম থেকে জেগে দেখেন মেয়ে পাশে নেই। ঘরের সদর দরজা কলাবসেবল গেইট খোলা। মা ও বড় ভাইয়ের মোবাইল ফোন এবং ঘরের চাবি নির্দিষ্ট স্থানে নেই। কাপড় পাল্টিয়ে নতুন জামা কাপড় পরে দিপা কোথায় যে চলে গেছে।
বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির পর একই ভবনের পাশের একতলা নির্মাণাধীন একটি ভবনে দিপার রক্তাক্ত লাশ খুঁজে পান তার পরিবার। পরিবারের লোকজন দিপাকে উদ্ধার করে স্থানীয় প্যারাডাইস মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দিপাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ওসমানীনগর থানা পুলিশ খবর পেয়ে সকাল ৯টার দিকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় দিপার লাশ।
ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম মাঈন উদ্দিন জানান-
নিহত দিপার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন, পিঠের কিছু অংশ থেঁতলানো।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন-
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার খালেদুজ্জামান, ক্রাইমসিনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ সেলিম মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওসমানীনগর (সার্কেল) আশরাফুজ্জামান, ডিবির ওসি ইকতিয়ার উদ্দিন, ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম মাইন উদ্দিনসহ সিআইডের টিম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়-
দিপা সিংহ প্রতিদিন স্কুল যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায় কিন্তু প্রায় দিন স্কুল ফাঁকি দিয়ে দিপার কতিপয় বান্ধবীদের নিয়ে তার কথিত প্রেমিক বালাগঞ্জ উপজেলার মধ্যবাজারের প্রান্ত বস্ত্রালয়ের কর্মচারী ইমনের সঙ্গে দেখা করত।
দিপার স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে-
গত দুই মাসে বেশির ভাগ দিনই সে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিল। চলতি মাসে মাত্র এক দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিল দিপা।
নিহত দিপার মামী বিথিকা দে বলেন-
গত এক সপ্তাহ পূর্বে দিপাদের বাসা থেকে আমার স্মার্ট ফোনটি খোয়া যায়। কে নিয়েছে তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার দিপা মারা যাওয়ার বিষয়টি জানার পর বালাগঞ্জ থেকে তাদের বাসায় আসার পূর্বে জানতে পারি ইমন নামের একটি ছেলের সঙ্গে দিপার প্রেম রয়েছে। একাধিকবার দিপা বালাগঞ্জে গিয়ে ইমনের সঙ্গে দেখা করেছে। এছাড়াও বালাগঞ্জের আরেকটি ছেলেও নাকি দিপাকে পছন্দ করে। ইমন ও সেই ছেলেটির মধ্যে দিপাকে নিয়ে ঝগড়ারও হয়েছে।
নিহত দিপার মা শিল্পী রানী সিংহ কাঁদতে কাঁদতে বলেন-
আমার জানা মতো আমাদের কোনো শত্রু নেই। আজ দিপা মারা যাওয়ার পর জানতে পারি দিপার সঙ্গে ইমন নামের একটি ছেলে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত সোমবার জানতে পারি আমাদের দিপা স্কুলে দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত। কেন এমটি হচ্ছে দিপার সঙ্গে অনেক কথা বলেও তার নিকট থেকে কিছু জানতে পারিনি। সে স্বাভাবিক ছিল। আমার মেয়েকে কে বা কারা হত্যা করেছে এটা পরিষ্কার। আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শান্তি চাই।
ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম মাঈন উদ্দিন বলেন-
ঘটনাটি দেখে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইমনসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদর জন্য পুলিশ হেফাজতে আনা হয়েছে। আশা করি দ্রুত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওসমানীনগর (সার্কেল) আশরাফুজ্জামান বলেন-
ঘটনাটি আমার পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করি ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারব।
No comments
আপনার কমেন্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!