গত ২৪ ফেব্রুয়ারী শুক্রবারে বান্দরবান-লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের হারগাজাপাড়ায় আদিবাসী মারমা নারীকে ধর্ষণ করে বাঙালি যুবক মো. কায়সার।...
গত ২৪ ফেব্রুয়ারী শুক্রবারে বান্দরবান-লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের হারগাজাপাড়ায় আদিবাসী মারমা নারীকে ধর্ষণ করে বাঙালি যুবক মো. কায়সার।
এ ঘটনায় শনিবার বিকালে ওই নারী বাদী হয়ে লামা থানায় মো. কায়সারকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন।
মামলা এজাহারে উল্লেখ করা হয়-
শুক্রবার দুপরের দিকে পাড়ার একটা চরে শাক তুলতে গেলে মো. কায়সার পেছন থেকে আক্রমণ করে মুখে গামছা চেপে ধরে। টেনে নিয়ে পাশে একাশি গাছের বাগানে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। বাধা দিলে মুখে চর থাপ্পড় দিয়ে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়। চিৎকার শুনে এলাকাবাসী এগিয়ে গেলে কায়সার পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আটক ও মারধর করে জনতা।
পরে খবর পেয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য মো. কায়সারকে সঙ্গে নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চেয়ারম্যান কায়সার সুস্থ হলে ‘স্থানীয়ভাবে’ বিচারের আশ্বাস দেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এর প্রতিবাদ এবং দোষী যুবককে গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার সকালে শহরে মধ্যমপাড়া রাজারমাঠে ‘বান্দরবান জেলা সচেতন ছাত্র সমাজ ও উইমেনস অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম' বিক্ষোভ করেছে।
একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে তারা মানবন্ধন করেন।
মানববন্ধনে মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের জেলা কমিটির সভাপতি উহ্লাচিং মারমা, বান্দরবান সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি থোয়াই অং মারমা, খিয়াং ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি হিরো খিয়াং, তঞ্চঙ্গ্যা স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়শেসেন প্রতিনিধি বিটন তঞ্চঙ্গ্যা ও ম্রো স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি তনয়া ম্রো বক্তব্য রাখেন, বক্তারা অভিযোগ করেন-
ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে হাতেনাতে ধরার পরও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাকে পালাতে সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ঘটনার চারদিন পরও অপরাধাীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
তারা স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধিকেও তদন্তের আওতায় আনাসহ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচার ও শাস্তির দাবি জানান।
মানববন্ধনে সংহতি বক্তব্যে আইনজীবী উবাথোয়াই মারমা বলেন-
মামলার এজাহার এবং ভুক্তভোগী নারী ও এলাকাবাসীর বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় ঘটনার পরপরই ধর্ষককে নিজের হেফাজতে নিয়ে বিচারের নামে আসামিকে পালানোর সুযোগ করে দেয় কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
“এ কারণে সংরক্ষিত আসনে এক মহিলা মেম্বার ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। এর আগেও পার্বত্য এলাকায় যত ধরনের অপরাধ সংগঠিত হয়েছে অপরাধীরা কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যায়; যার ফলে পাহাড়ে দিন দিন ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে।”
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন উইমেন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম-এর জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাধবী মারমা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান বলেন-
শুক্রবার বিকালে ভুক্তভোগীরা যখন আমার কাছে আসে তখন ধর্ষণের অভিযোগ দেওয়া হয়নি। ধর্ষণের অভিযোগ আসলে সাথে সাথে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে থানায় দিয়ে দিতাম।
ভুক্তভোগী বলেছিল, তাকে গামছা দিয়ে মুখে চেপে ধরেছে। চর থাপ্পড় দিয়েছে। তখন অভিযুক্ত ব্যক্তিকেও পাড়াবাসীরা মারধর করার পর তিনিও মুর্মূষু অবস্থায় ছিল। এ কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সুস্থ হওয়ার পর বিচার করার কথা বলা হয়েছিল।
সুস্থ হওয়ার দুদিনের মধ্যে বিচারের মুখোমুখি করার শর্তে কায়সারকে তার বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। পরে চকরিয়ার একটা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কথা শুনে পালিয়ে গেছে বলে শুনেছি।
লামা থানা ওসি শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন-
কায়সারকে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
No comments
আপনার কমেন্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!