০৯ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৩ টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটে, ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গিতে বিভিন্ন মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুর নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে...
০৯ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৩ টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটে, ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গিতে বিভিন্ন মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুর নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাড. গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক।
অ্যাড. গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন -
গত ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ গভীর রাতে ঠাকুরগাও জেলার বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার ধনতলা, পারিয়া ও চারোল ইউনিয়নের ১২টি মন্দিরের ১৪টি প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় জাতীয় হিন্দু মহাজোট গভীর উদ্বেগ প্রকাশ, তীব্র নিন্দা ও গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করছে। ক্ষতিগ্রস্থ মন্দির সমূহের মধ্যে ধনতলা ইউনিয়নের উত্তর সিন্দুর পিন্ডি হরিবাসর মন্দির, টাকাহারা পাকা সড়কের পাশে কালিমন্দির, হরি মন্দির, মনষা মন্দির, মালিপাড়া শ্মশান কালি মন্দির, নাথপাড়া সার্বজনীন কালি মন্দির অন্যতম। এছাড়াও পারিয়া ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার ৩টি ও চারোল ইউনিয়নের নাথ পাড়ায় ১টি মন্দিরও রয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গির বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে আমরা তৎক্ষণাৎ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং হিন্দু মহাজোটের স্থানীয় নেতা কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনার পূর্বাপর জানার চেষ্টা করি। এসময় তারা নিশ্চিত করেন যে, স্থানীয় হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে এ ঘটনায় কোনরুপ উত্তেজনা বিরাজ করছে না বরং প্রতিমা ভাংচুরের বিষয়টি রাজনৈতিক সড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দারা চিহ্নিত করেছেন। বালিয়াডাঙ্গি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। এখানকার অধিকাংশ জনগোষ্ঠী হিন্দু এবং জনপ্রতিনিধিগণও হিন্দু সম্প্রদায়ের। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় হিন্দু মুসলমান সহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে আসছে। প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ হিন্দু মহাজোট ঘটনার পরপরই বিষয়টি ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রসাশনের নজরে এনে আক্রান্ত মন্দির সমূহের নিরাপত্তা বিধান এবং জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। সার্বিক কার্যক্রমে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার আন্তরিকতা চোখে পড়ে। আমরা পুলিশ প্রসাশন ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এরকম তৎপরতা সব সময় প্রত্যাশা করি। এছাড়াও সরকারের শীর্ষমহল থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের ঘটনাটিকে আমলে নিয়ে বিবৃতি প্রদান করে। দেশের যে কোন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন হলে জাতীয় হিন্দু মহাজোট সবার আগে প্রতিক্রিয়া জানায় এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে এসে দাঁড়ায়। ঠাকুরগাঁও এর ঘটনাটিতেও সর্বাগ্রে হিন্দু মহাজোট হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সরকার যেহেতু বিষয়টি আমলে নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে তাই আমরা সরকারের এ পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতের দাবী জানাই।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এদেশে আমার হিন্দু মুসলমান হাজার বছর ধরে একই গ্রামে, একই মহল্লায় পাশাপাশি শান্তি ও সৌহার্দপূর্ণভাবে বসবাস করছি। একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে আসছি। আপনারা যারা সংবাদ মাধ্যমে কাজ করেন তারাও হিন্দু না মুসলমান এ বিবেচনা কখনো করেন না। এর আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যতগুলি সংহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার প্রত্যেকটির পিছনেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল ও স্বার্থশ্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র আমরা লক্ষ করেছি। বালিয়াডাঙ্গির ঘটনাও তাই। অথচ বরাবরের মত একটি মহল প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে প্রচার করে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে। ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
আপনাদের মাধ্যমে আমরা দেশী-বিদেশী গণমাধ্যম এবং বাংলাদেশের সুশীল সমাজ সহ সকল মানুষকে জানাতে চাই ঠাকুরগাঁও এর ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের ফসল নয় বরং একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। হিন্দু মহাজোট ঠাকুরগাঁও এর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ মন্দির সমূহ মেরামতে যথযথ ক্ষতিপুরন প্রদান, জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনার দাবী জানাচ্ছি এবং এলাকা সমূহে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোড় দাবী জানাচ্ছি।
আমরা দেখতে পাচ্ছি গুটিকয়েক ধান্ধাবাজ সুবিধাবাদী সরকারের কাছে সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন করার দাবী জানাচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি এদেশের হিন্দু সম্প্রদায় সংখ্যালঘু কমিশন ও সুরক্ষা আইন নামে কোন আইন চায় না। সুরক্ষার সকল আইন এদেশে বিদ্যমান আছে; আমরা তার যথাযথ প্রয়োগ চাই। একই সাথে আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানিয়ে দিতে চাই ২০০১ সালে বিএনপি জোটের ক্ষমতায় আসার প্রাক্কালে ভোলা সহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। তৎকালীন সরকার সে ন্যক্কার জনক ঘটনার বিচার না করায় ২০০৯ সালে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রীটের প্রেক্ষিতে অবসরপ্রাপ্ত একজন জেলা জজকে চেয়ারম্যান করে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে; যা শাহাবুদ্দিন কমিশন নামে পরিচিত। কমিশনে ৪ হাজারের অধিক অভিযোগ জমা পরে। কিন্তু কমিশন আজ পর্যন্ত কোন রিপোর্ট দাখিল করে নাই। সে কারনে কোন কমিশন হিন্দু সমাজ চায় না। হিন্দু সম্প্রদায়ের এক দফা দাবী সংখ্যানুপাতে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পূনঃ প্রতিষ্ঠা।
No comments
আপনার কমেন্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!