মুদি দোকানদার সুমন চন্দ্র দে (৪০)। তিনি নেত্রকোনার মদন উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের বাড়রী গ্রামের কাজল চন্দ্র দে-এর ছেলে। বাবা, মা, স্ত্রী ও দুই...
মুদি দোকানদার সুমন চন্দ্র দে (৪০)। তিনি নেত্রকোনার মদন উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের বাড়রী গ্রামের কাজল চন্দ্র দে-এর ছেলে। বাবা, মা, স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। দীর্ঘ আট বছর ধরে পৌর সদরের মদন বাজারে একটি মুদি দোকান পরিচালনা করছেন।
দোকান থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তার সংসার। কিন্তু ১৫ জুন বৃহস্পতিবার মেঘলা রাতে শত্রুতার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সুমনের মুদি দোকান। আয়ের একমাত্র উৎস দোকানটি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে তার পরিবার।
সুমনের অভিযোগ- দোকানের পাওনা টাকা চাওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় জড়িত আপন মিয়া (১৮) নামের এক যুবক অগ্নিদগ্ধ হলে রাতেই পুলিশের টহল গাড়িতে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় হাসপাতালে। কিন্তু অভিযুক্ত যুবক মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে রাতেই পালিয়ে গেছে। আপন মিয়া মদন বাজার এলাকার পুলিশের সোর্স নামে পরিচিত আল আমিনের ছেলে।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস অফিস সূত্রে জানা গেছে- বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মদন বাজারে সুমনের মুদি দোকানে হঠাৎ আগুন ধরে যায়।
লোকজন তাৎক্ষণিক মদন ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন। এতে আশপাশের দোকানগুলো রক্ষা পেলেও পুড়ে ছাই হয়ে যায় সুমনের দোকান। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ চার-পাঁচ লাখ টাকা হলেও সুমনের দাবি ক্ষয়-ক্ষতি আরো বেশি। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের সঠিক ধারণা নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
সুমন চন্দ্র দে বলেন- ‘আমার পঙ্গু পা নিয়ে কোনো কাজ করতে পারি না। তাই অনেক কষ্টে একটি মুদি দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। ছোট দুই মেয়ে ও স্ত্রী দোকান চালাতে আমাকে সহযোগিতা করে। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যাই। রাতে খুব বেশি বৃষ্টি থাকায় বাসা থেকে বের হইনি। এই সুযোগে আল-আমিনের ছেলে আপন মিয়া আমার দোকানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আগুন লাগানোর সময় আপন মিয়ার শরীরে আগুন লেগে যায়। পুলিশের গাড়িতে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আর কোনো খোঁজখবর পাইনি।’
তিনি আরো বলেন- ‘কোরবানি ঈদ সামনে রেখে মালামাল দিয়ে দোকান সাজিয়েছিলাম। আর যাদের কাছে বকেয়া আছে তাদের তাগিদ দিয়েছিলাম। একই ভাবে আল-আমিনের কাছে বকেয়া টাকা চাওয়ায় সে আমার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। আর সেই কারণে তার ছেলে আমার দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার সারা জীবনের সঞ্চয় আগুনে পুড়ে গেছে।’
সুমনের স্ত্রী বাসনা রানী বলেন- ‘আমার স্বামীর পায়ের সমস্যা। তাই দুই মেয়ে নিয়ে আমিও দোকান পরিচালনা করি। কিন্তু এখন আমাদের বেঁচে থাকার আশা নেই। সার জীবনের স্বপ্ন মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেল। আমরা এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি চাই।’
মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার আব্বাস আলী বলেন- ‘বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৩টার সময় আপন মিয়া নামের এক যুবক অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে আসে। তার শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যাওয়ায় প্রাথমিক চিকৎসা দিয়ে ওষুধ আনতে বাইরের ফার্মেসিতে পাঠাই। কিন্তু পরে সে আর হাসপাতালে আসেনি।’
মদন ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আকরামুল ইসলাম বলেন- ‘বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে আগুন লাগার খবর পাই। ঘটনাস্থলে দুইটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। আগুন লাগার আগে থেকেই পৌর সদরে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিল। কিন্তু তদন্ত ছাড়া আগুনের সূত্রপাত নির্ণয় করা সম্ভব হবে না।’
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তাওহীদুর রহমান বলেন- ‘মদন বাজারে এক ব্যবসায়ীর দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে এক যুবক আহত হলে পুলিশের টহল দলের সিএনজি দিয়ে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়া বলেন- ‘খবর পেয়ে শুক্রবার আমি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর দোকান পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সরকার কর্তৃক সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
অভিযুক্ত আল আমিন ও আপনের মুঠোফোনে একাধিক কল দিলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
-HTPC
No comments
আপনার কমেন্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!